লালমনিরহাট সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকের যোগসাজশে বিদ্যালয়ে প্রায় এক মাস উপাস্থিত না থেকেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর
করেছেন মহসীন আলী নামে এক শিক্ষক। এ নিয়ে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম
লালমনিরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। যে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে দেশের বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করা অনেক শিক্ষার্থী।একসময়ের
সনামধন্য সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আগের মত নেই বলে দাবি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের।
প্রায় এক বছর আগে দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক ভব শংকর রায় অবসর নেয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হয়।
এরপর সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম সিলভি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই শুরু হয় নানা অনিয়ম। এই এক
বছরেই মহসীন আলীসহ কয়েকজন প্রভাবশালী শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে হাত মিলিয়ে বিদ্যালয়ের অনুদানের অর্থসহ বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছেন বলেও অভিযোগ করেছেন নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী। সূত্র জানায় শিক্ষক মহসীন আলী দীর্ঘদিন থেকে নিজেকে একজন প্রভাবশালী ব্যাক্তি হিসেবে দাবী করে আসছেন। নিজ এলাকায় চাকুরীর সুবাদে তার
নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি।
এ কারনে তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসেন না, ক্লাসও নেন না। অথচ শিক্ষক হাজিরা খাতায় বিদ্যালয়ে তার নিয়মিত উপস্থিত থাকা দেখানো হয়েছে। ঐ
বিদ্যালয়ে কর্মরত একাধিক শিক্ষকগণ আরো জানান, গত জুলাই মাসের ৫ তারিখে মোঃ আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়ার পর পরই বিদ্যালয়ের
হল রুমের কিছু চেয়ার টেবিলের জন্য জেলা পরিষদ বরাবরে একটি আবেদন করেন। সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য জেলা পরিষদ তিন লক্ষ টাকার অনুদান দেন। উক্ত টাকা
খরচের জন্য প্রধান শিক্ষক ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন। যে কমিটিতে ওই শিক্ষক মহসীন আলীকে রাখা হয়। এতে অন্যান্য শিক্ষকগণ প্রতিবাদ করলে পরে সেই কমিটির সদস্য সংখ্যা
বাড়িয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
এ কারনে মহসীন আলী প্রতিবাদকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন গালাগালি ও দেখে নেয়ার হুমকী দেন। এ ব্যাপারেও তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক বরাবরে একটি
অভিযোগ দেন সেই শিক্ষকগণ। পরে প্রধান শিক্ষক সেই ঘটনার তদন্তের জন্যেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। যার তদন্ত রিপোর্ট গত রবিবার জমা দেয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ
পর্যন্ত জমা দেয়া হয়নি।এক মহসীন আলী শিক্ষকের কারনে বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক আজ কোন ঠাসা হয়ে আছে। তার ভয়ে অন্যান্য শিক্ষকরা কিছু বলতে পারে না। এছাড়াও, এই শিক্ষক মহসীন
আলীর বিরুদ্ধে ছাত্র পেটানো, অভিভাবক সমাবেশের নামে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাত, গত এসএসসি পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে সিক বেডে পরীক্ষা নেয়া, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা
আত্মসাৎ,ছাত্র ভর্তি বানিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরেও বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় অথচ তার থেকেও বিদ্যালয়ে ১০/১২ জন সিনিয়র শিক্ষক রয়েছেন। এ
বিষয়গুলো চাউর হলেও একাধিক দায়িত্বে থাকার বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।
এ ব্যাপারে সেই এক বছর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শাহ মোঃ
রফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মহসীন আলী কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় কোমরে আঘাত পাওয়ায় তিনি বেশ কিছুদিন বিদ্যালয়ে আসতে পারেন নাই। সেই সময় তিনি
ছুটির আবেদন করলেও শিক্ষক হাজিরা খাতায় শিক্ষক মহসিনকে উপস্থিত দেখানো হলো কিভাবে সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে সেই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করা প্রধান শিক্ষক কোন সদুত্তর দিতে
পারেন নাই।
অভিযুক্ত শিক্ষক মহসীন আলীর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার আজকের এই অবস্থানের জন্য অনেকেই তাকে হিংসা করছে। তার সুনাম ক্ষুন্ন করতেই কতিপয়
শিক্ষক তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তার বিরুদ্ধে আনিত এ সকল অভিযোগ সম্পুর্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেও দাবী করেন তিনি। বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম
আজাদ বলেন, দেখুন আমি গত জুলাই মাসের ৫ তারিখে এখানে যোগদান করেছি। আমার যোগদানের আগে বিদ্যালয়ে কি হয়েছে না হয়েছে আমি জানি না আর এ ব্যাপারে কিছু বলতেও পারবো না।
তবে আমি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করছি। সনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই ঘটনা গুলো এলাকয় চাউর হলে স্থানীয় সচেতন মহল,শুশিল
সমাজের প্রতিনিধি ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাবি ঘটনা যাই থাকুক তা দ্রুত সমাধান করে বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার।